ফিলিপে কুতিনহো-ছবি: সংগৃহীত
ব্রাজিলের ‘ম্যাজিক চতুষ্টয়’ নিয়ে বেশ মধুর সমস্যায় পড়েছেন কোচ তিতে। নেইমার, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, ফিলিপে কুতিনহো ও উইলিয়ানকে নিয়ে গঠিত এবারের বিশ্বকাপের শক্তিশালী আক্রমণভাগে বাকিদের অবস্থান নিয়ে খুব একটা প্রশ্ন নেই। কিন্তু গোল করতে সক্ষম কুতিনহোকে কোথায় খেলানো হবে, তা এক প্রশ্ন বটে। তাকে মিডফিল্ডে রেখে আদৌ কি সফল হবেন তিতে?
প্রশ্নটা উঠেছে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রস্তুতিমূলক ম্যাচে ৩-০ গোলে জেতা ম্যাচ থেকেই। এমনকী বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আক্রমণভাগের ডানদিকে জায়গা নিয়ে উইলিয়ান ও কুতিনহোর মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতাও চোখে পড়েছে। তবে এখন দু’জনের জন্যই জায়গা তৈরি হয়েছে, যেটা দলের সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে ঘটিয়েছে এক ধরনের বিবর্তন।
ধুঁকতে থাকা ব্রাজিল দলের দায়িত্ব যখন তিতের হাতে তুলে দেওয়া হলো, কেউ ভাবেনি এমন দলকে এতো দ্রুত বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দলে পরিণত করতে সক্ষম হবেন তিনি। কিন্তু কঠিন এই কাজটিই খুব অসাধারণভাবে সমাধান করে ফেলেছেন তিতে। নেইমারনির্ভর একটি দলকে তার প্রভাব থেকে বের করে স্বয়ংসম্পূর্ণ দলে পরিণত করেছেন এই ব্রাজিলিয়ান কোচ।
তিতের ব্রাজিল বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ১০ জয়, ২ ড্র আর কোনো পরাজয় ছাড়াই পেরিয়ে এসেছে। প্রতিপক্ষের জালে ৩০ গোল দেওয়ার পাশাপাশি খেয়েছে মাত্র তিনটি। আর এই অসাধারণ সাফল্যে বড় ভূমিকা রেখেছে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডত্রয়ী- একজন বল দখল করেছেন, একজন সেটা পাস করেছেন, একজন তা নিয়ে গোলমুখে দৌড় দিয়েছেন।
কাসেমিরো বল দখলে রেখেছেন সেরা ভূমিকা। রেনাতো অগাস্তো বল পাসিং ফুটবলে সংগঠকের ভূমিকায় থেকে দুই পাশকে একসূত্রে গাঁথার কাজ সেরেছেন। আর পাওলিনহো সারপ্রাইজের মতো করে ফরোয়ার্ডদের দিয়েছেন প্রতিপক্ষের পেনাল্টি বক্সে ঠেলে।
তিতের এই দুর্দান্ত পদ্ধতি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে দক্ষিণ আমেরিকার প্রতিপক্ষদের বিপক্ষ দারুণ কাজে লেগেছে। যদিও এবার বাছাইপর্বে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের দলগুলোর খেলা পূর্বের তুলনায় বেশ দুর্বল মনে হয়েছে। ব্রাজিলের সব প্রতিপক্ষ নিজেদের ডিফেন্স সামলাতেই বেশি ব্যস্ত ছিল। তবে এর পেছনে ব্রাজিলের দুর্দান্ত আক্রমণভাগেরও ছিল বড় ভূমিকা।
বিশ্বকাপের চ্যালেঞ্জ যে ভিন্ন হবে তা নিশ্চয়ই জানেন তিতে। ইউরোপের দলগুলোর বল নিয়ন্ত্রণে বিশেষ দক্ষতা যেমন আছে, তারা মাঠের উপরে উঠে আসে আর তারা দল দখল এবং তাদের ফুলব্যাকরাও আক্রমণে ওঠার সুযোগ পায়। তাই হয়তো তিতে মিডফিল্ডে বাড়তি সুরক্ষার চিন্তা করতে পারেন। ঠিক এই জায়গায় হয়তো সুযোগ পাবেন রেনাতো অগাস্তো, যিনি ফার্নান্দিনহোর কাছে জায়গা হারিয়েছিলেন।
অগাস্তোকে নিলে মিডফিল্ডে শক্তি বাড়বে সন্দেহ নেই। তবে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচের প্রথমার্ধে মিডফিল্ড নিয়ে কিছুটা অসুবিধায় পড়তে হয় ব্রাজিলকে। ক্রোয়েশিয়ার আক্রমণে চাপ বাড়ানোর যে পদ্ধতি দেখা গেছে এমন পদ্ধতির মুখোমুখি এর আগে কখনও হয়নি তিতের দল। কাসেমিরো, পাওলিনহো আর ফার্নান্দিনহোকে নিয়ে গঠিত মিডফিল্ডের পাসিংয়ে দুর্বলতা চোখে পড়েছে।
প্রথমার্ধের পর নেইমারকে জায়গা ছেড়ে দিতে তুলে নেওয়া হয় ফার্নান্দিনহোকে। তারপর থেকেই ব্রাজিল নিজেদের স্বাভাবিক খেলায় ফেরে। আবার অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে নেইমারকে নামানো হলো। ফার্নান্দিনহোর বদলে নামানো হলো কুতিনহোকে (অগাস্তো ফিট ছিলেন না)। সেই ম্যাচে মিডফিল্ড সামাল দিলেন কাসেমিরো, পাওলিনহো এবং কুতিনহো, যা দলের আক্রমণে বাড়তি শক্তি জুগিয়েছে।
তিতের পরিকল্পনা অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে পুরো কাজে লেগেছিল, বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে, যখন আক্রমণের সুযোগ বেড়ে যায়। হয়তো একই ফরমেশন আজ (১৭ জুন) রাতে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচেও রাখবেন তিতে। এটা হয়তো দলের জন্য ফলদায়ক হতে পারে, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেই কি মিডফিল্ডের এই ত্রয়ীকেই বহাল রাখবেন?
এই প্রশ্নের উত্তর নিহিত আছে কুতিনহোর খেলার ধরনের মাঝে। তিনি কি সত্যিকারের মিডফিল্ডার নাকি স্ট্রাইকিং সহযোগী? সবাই জানে পরের ভূমিকাতেই বেশি সাবলীল কুতিনহো। অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় গোল করেই তা অনেকটা বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে তার সবচেয়ে বেশি সফলতা সন্দেহাতীতভাবে প্রতিপক্ষের ৩০ গজের মধ্যেই। মিডফিল্ডে তাকে রাখলেও আক্রমণে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট সুযোগ দিতে পারেন তিতে।
প্রীতি ম্যাচে সফলতা পেলেও ইউরোপ থেকে বিশ্বকাপ জেতা সহজ নয়। ব্রাজিল গত ৬০ বছরে যা করতে পারেনি, মূল আসরে এমন অসাধারণ আক্রমণভাগ নিয়ে কি তা করে দেখাতে পারবে? তবে মিডফিল্ডের চতুষ্টয় যদি একসঙ্গে জ্বলে ওঠেন তাহলে ব্রাজিলের পক্ষে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, ২০১৮
এমএইচএম/এএ